প্রকাশিত: Thu, May 18, 2023 10:38 AM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 6:06 AM

মিডিয়াওয়াচ প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন : যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কেউ করেনি

আরশাদ মাহমুদ : দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দু’সপ্তাহ বিদেশ সফরের পর দেশে এসে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এটা অনেকটা একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং গত ৪০ বছর থেকে এটা আমরা দেখে আসছি। বলে রাখা ভালো আমি এর আগে প্রায় প্রতিটা সংবাদ সম্মেলনেই উপস্থিত থাকতাম।

তিন দেশ সফরের উপরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার জন্য তিনি এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। কিন্তু ওই তিন দেশ সফরের ব্যাপারে তিনি তেমন কিছু বলেননি। 

অন্যদিকে ওই প্রেসকনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী মূলত স্যাংশনের উপর খুব কড়া বক্তব্য দিয়েছেন এবং পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, এখন থেকে যেসব দেশ আমাদের স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমরা আর কোনো জিনিস কিনবো না। তিনি অবশ্য নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের নাম বলেননি। তবে এটা কারও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, তার এই ক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিলো আমেরিকা। তার কারণ তারাই র‌্যাবের উপরে স্যাংশন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বা এটার ইম্প্যাক্ট কী হবে সেটা নিয়ে কোনো বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট  সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে দেখলাম না। সঙ্গতভাবেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তার সমর্থকদের খুব উজ্জীবিত করেছে এবং বিরোধী দল এটা নিয়ে নানান সমালোচনা করছে এবং এই প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। 

এখন আমার প্রশ্ন, সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকা এখানে কী হওয়া উচিত ছিলো? প্রথমত তাদের খুঁজে বের করা উচিত ছিলো যে এই বক্তব্য যে দেশের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রতিক্রিয়াটা কী? আমি ইন্টারনেট সার্চ করে এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কোনো সংবাদ আমেরিকার কোনো গণমাধ্যমে পেলাম না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে তারা কি এটার কোনো গুরুত্বই দেয়নি? আমি দীর্ঘদিন আমেরিকার সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সত্যি কথা বলতে কী এটা তাদের কাছে কোনো খবরই না, এই খবরের কোনো গুরুত্বই তাদের কাছে নেই এবং এ জন্যই তারা এটা নিয়ে একটা লাইন লেখেনি বা টেলিভিশনে প্রচার করেনি। 

এটার কারণ সম্ভবত এই যে বাংলাদেশ আমেরিকার ফরেন পলিসিতে খুব একটা বেশি ম্যাটার করে না। তারপরের প্রশ্ন হলো আমেরিকার এমন কী ক্ষতি হবে যদি বাংলাদেশ তাদের থেকে কোনো কিছু না কেনে। প্রশ্নের উত্তরটা খুবই সহজ। তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ আমেরিকার বিরাট অর্থনীতিতে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে আমেরিকা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বাংলাদেশ থেকে আর কোনো জিনিস কিনবে না, বিশেষ করে তৈরি পোশাক তাহলে আমাদের রপ্তানিতে যে বিরাট একটা ধস নামবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যাহোক সেটা তো অর্থনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তারা এটা নিয়ে আলোচনা করবেন বা লেখালেখি করবেন। আমি যেহেতু তাদের একজন নই, সেজন্য আমি সাংবাদিক হিসেবে এই প্রশ্নগুলো তুললাম।

এবার আসি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। পুরো সংবাদ সম্মেলনে আমি কোথাও পড়লাম না বা শুনলাম না যে প্রধানমন্ত্রী যে তিন দেশ সফরে গেলেন  এর মূল অর্জনটা কী? সত্যি কথা বলতে কী জাপান, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য এই তিন দেশের কোনো সরকার বা জনগণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ ছিলো না। এর প্রমাণ ওই সব দেশগুলোর সংবাদ মাধ্যম সম্পূর্ণভাবে তার সফরকে উপেক্ষা করেছে এবং একটি লাইনও ছাপেনি বা টেলিভিশনে প্রচার করেনি। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো যে এত বড় দলবল নিয়ে, এতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যে সফর সম্পন্ন হলো সেই দেশের মানুষগুলো তো এ সম্পর্কে কিছুই জানল না। ফলে এর প্রভাব সেই দেশের জনগণ বা দেশের উপর পড়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে ইতিমধ্যে আপনারা পত্র-পত্রিকা বা টেলিভিশনে দেখেছেন যে কয়েকজন মন্ত্রী বিশেষ করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে এই সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করেছেন।

এটাই আমার প্রশ্ন, ভাবমূর্তি কীভাবে উজ্জ্বল হলো যখন ওই দেশগুলোর জনগণ এ ব্যাপারে কিছুই জানল না। তিনি শুধু গেলেন আর আসলেন এবং শুধু এগুলো বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমেই প্রচার পেলো। সত্যিকার অর্থে প্রকৃত সাংবাদিকতা থাকলে এই প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোই সংবাদমাধ্যমের করা উচিত ছিলো। বিশেষ করে এই ডলার সংকটের মধ্যে এতো লোকজন নিয়ে বিদেশ সফরে আমাদের প্রকৃত অর্জনটা কী? এই সফরগুলো কি কস্ট ইফেক্টিভ হয়েছে? আমার জানা মতে, একমাত্র জাপান ছাড়া অন্য দুই দেশে প্রায় সব খরচ বাংলাদেশকে বহন করতে হয়েছে। তবে এই প্রশ্নগুলো যে সেখানে উপস্থিত কোনো সাংবাদিক করবেন না সেটা তো আমরা সবাই জানি। তাই মাঝে মাঝে ভাবি যে বাংলাদেশে কি প্রকৃত সাংবাদিকতার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই! লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক